মেলাতে সেদিন দেখা, হঠাৎ দেখাতে তার সাথে অনেক কথা হলো। সেই পুরোনো স্মৃতি গুলো খুব রঙিন ছিলো, একসাথে কতো সময় কাটিয়েছি, সেই স্মৃতি গুলো আজও তাজা। পরিস্তিতি দূরে করেছে, কিন্তু বন্ধুত্ব এখনও সেই একই রয়ে আছে।
যাইহোক রাতে মেলা শেষ, সবাই একে একে ঘরে ফিরছে। আজ রাতে আমার ফেরা হলোনা, তেমন কোনো কারণ নেই যদিও, তবু কেনো একটা টান রয়ে গেলো, তাই গেলাম না।
পরের দিন আবার মেলা জমেছে, মানুষ আজ যেনো সব কিনে নেবে, জমিয়ে কেনাকাটা চলছে। কোনো এক খুশি তাদের মুখে চোখে। যাইহোক আজ আর এখানে থাকলে হবে না। রাতে তাই রওনা হলাম। রাতের পথে একা হাঁটতে হবে। তাই চলেছি দিক হারা পথিকের মতো। আমার তো কোনো গন্তব্য নেই, তাই কোনো তারাও নেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর। এক মাইল হাঁটার পর, এক জায়গাতে দেখি এক মারোয়ারি বয়স্কো মহিলার সাথে সেই বান্ধবী বসে। কোলে একটা ফুটফুটে শিশু, যাকে সে আদর করছে। আমায় দেখতে পেয়ে ভীষণ খুশি হলো। বললো কতদূর যাবে, আমি তো কি আর বলবো, বললাম সামনের বাম দিকের রাস্তা ধরবো। এতে সে খুশি হলো এবং বলল চলো তবে। মারওয়ারি বললো ‘এ মেয়ে যেওনা, আজ রাত এখানেই কাটিয়ে দাও। কাল যাবে।’ কিন্তু সে যে আমার সাথেই যেতে চায়, আমিও তো তাকে বাঁধা দিতে পারছিনা। আমরা কথা বলতে বলতে চলা শুরু করলাম। আশেপাশে দিয়ে কতো গাড়ি দুদিকে ছুটে চলেছে। আমরা তার মাঝে শাল বোনের মাঝ দিয়ে হেঁটে চলেছি। হঠাৎ দেখি একটা বড়ো লরি কোথা থেকে এসে বনের মধ্যে ঢুকে গেলো। আমরা সেদিকে না খেয়াল করে এগিয়ে চললাম। এই অন্ধকার রাত্রে অজানা অনেক আশঙ্কা থাকে। তবু পথ চলা, কথায় কথায় কোথায় যে এসে পড়েছি জানিনা। হঠাৎ সামনে দেখা যায় এক বড় গোছের মানুষ পথ আটকে দাঁড়িয়ে। আমরা বোঝার আগেই ওদিক থেকে হঠাৎ আওয়াজ এলো। তোরা কোথায় যাচ্ছিস। আমরা তো চিনিনা জানিনা তবু বললাম বর্জড়ার মাঠে মেলা বসেছিলো সেখান থেকে আমরা বাড়ির পথে ফিরছি। তাতে উনি কি বুঝলো জানিনা। বললাম আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তখন জানিনা কেনো হঠাৎ বলে বসলো ঝুলিতে কি আছে। এবার আমাদের তো সন্দেহ হতে শুরু করলো। যাইহোক আমরা বললাম, কেনো বলুন তো। তাতে উনি বলে বসলেন– কেনো জেনে তোরা কি করবি। তখন আমরা বললাম, আপনি সরে গেলে আমরা তবে যেতে পারি। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। কি জানি না হঠাৎ একটা বন্দুক দেখিয়ে বসে, আমি তাৎক্ষণিক সেটা লাঠির কায়দায় আমার কাছে নিয়ে নিই। তারপর আর একটা বন্দুক বের করে। আমি তখনই আমার হাতের বন্দুকটি চালিয়ে বসি। কিন্তু তাতে গুলি ছিলোনা। তখন একটি আওয়াজ হয়, আর শুনতে পায় এই দেখ বন্দুক এইভাবে বন্দুক চালাতে হয়। এরপর পাশে দেখি বান্ধবীর দেহটা রাস্তায় লুটিয়ে পড়েছে, সব শেষ হয়ে যায় নিমেষে, বাঁধ ভাঙা কান্নায় দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে, আর বলতে থাকে এমন কেনো হলো। ও কি অপরাধ করলো যে এমনটি করলেন। কি ক্ষতি করেছিলাম আমরা। কি জানি ওই লোকটি কাছে এসে বলে কে হয় ও তোমার। আমি অবাক চোখে বলি ও আমার সব, ও আমার প্রাণ। কেনো কেরে নিলেন আমার থেকে। এবার কি নিয়ে বাঁচবো। সে বলে ও কি তোমার বৌ, যে তুমি বলছো কি নিয়ে বাঁচবে। তারপর বলে তোমার সাথে তো দুদিনের দেখা তবে কেনো এমন বলছো। আমি অবাক, ও কে। এবার আমি বলি আপনি কি জানেন, আমার ওর মধ্যে কি আছে, আর কবে দেখা হয়েছে, আপনি কে যে এত জানেন। আপনি কি পারবেন ওকে ফিরিয়ে দিতে। তাতে উনি বলেন ওই দেখো ও ফিরে এসেছে। আমি অবাক, এ কেমন অদ্ভুত ব্যাপার। সত্যি বান্ধবী ফিরে এসেছে যে। তখন উনি বলেন, আমি সব জানি, আজ তোমার পরীক্ষা শেষ, আজ তুমি সব পরীক্ষায় পাশ করে গেছো। এমন মানুষ সত্যি আগে দেখিনি। তুমি আমার মন জয় করেছো, তোমার জন্য সব করতে পারি। আমি হাত জোর করে ওনার দুটি পায়ে নমস্কার করি। আমি ধন্য ওনার মতো মানুষের মন জয় করতে পেরে। আমার কিছু চায়না, শুধু আমরা চায় একটি ছোট্ট ঘর যেখানে আমাদের ছোট্ট পরিবার নিয়ে সুখে দিন কাটাতে পারি। আমাদের কোনো লোভ নেই। পাশে এসে বান্ধবী ও ওনাকে প্রণাম করে। আর বলে আপনি সব জানেন। আমার আর কিছু চাইনা, জগতের সমস্ত সুখ আমি পেয়েছি, পথে অনেক ঘুরেছি, খুঁজে চলেছি বন্ধুকে, জানেন এমন বন্ধু আর একটি পাবোনা। জীবনের অর্ধেকটাই আমার এই সুখের খোঁজে ফিরে চলেছে, আপনি সব জানেন, আমি আর পারছিনা। উনি বলেন আজ থেকে তোদের দুজনকে কেও আলাদা করতে পারবেনা, যা তোরা যেখানে যাচ্ছিলিস, দেখবি সামনে একটা মোর আসবে, সেখানে ডানদিকে চলে যাস, দেখবি ঐদিকে তোদের জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। আমরা ওনার আশির্বাদ নিয়ে চললাম, হ্যা, সেই মোর আসে, আমরা চলি এগিয়ে, ডানদিকের ওই রাস্তাটি দিয়ে, ক্রমশ ভোর হয়ে আসে…………—মানিক
Read it at Pratilipi: Click here